অসংখ্য নবী রাসূলের স্মৃতি ধন্য ফিলিস্তিন

Daily Inqilab গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম

মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মুকাদ্দাস। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত। এ মসজিদ থেকে মিরাজে গমন করেন আল্লাহর রাসূল (সা.)। সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব নবী-রাসূলগণের নামাজের ইমামতি করেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে ৫০ হাজার গুণ সওয়াব, বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজে ২৫ হাজার গুণ সওয়াব’ (ইবনে মাজাহ)।
ফিলিস্তিনের ভূমি অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী-রাসূলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণস্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি। মুসলমানদের পবিত্র এ ভূমি ভাঙা-গড়ার সর্বশেষ পর্বে এখন ইহুদিদের দখলদারির করাল গ্রাসে আক্রান্ত। ৬৪৮ সালে আমিরুল মুমিনিন হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন।
এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; সুলতান অনুমতি দেননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; এর অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ‘মসজিদুল আকসা’ জবর দখল করে। তারপর ক্রমশ মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে। এরপর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনের মুসলিমদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমর্থন করছেন।
মুসলিমদের সব দল, উপদল, মাজহাব— এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব ব্যাপক।এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের উপর ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।
আল্লাহ বলেন, পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১)। মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।’( সুরা বাকারা, আয়াত-১৫০)। হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত : মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস।
সহিহ বুখারিও মুসলিমে হযরত আবু সাইদ খুদুরি (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো (জায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ। (হাদিস, ৭০৭)। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) হযরত বারা ইবনে আজিব (রা.) কে সাতটি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম মজলুমকে সহায়তা করা (বোখারি)। তিনি যখন মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) কে গভর্নর হিসাবে ইয়েমেনে পাঠান, তখন তাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না’ (বোখারি)। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্ককে বাংলাদেশ জালিম-মজলুমের সম্পর্ক হিসাবেই দেখে। ফলে বাংলাদেশ সব সময় মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মুসলিম ভাই হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।
সূরা আনআমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ এ আয়াত পড়ে বিশ্ব মুসলিমও আশায় বুক বেধে ইসরাইলের এ জুলুমের অবসান চায়। আল আকসাকে ঘিরে আবার জেগে উঠবে নিরাপদ প্রাণের স্পন্দন। অসংখ্য নবী-রাসূলের পদধন্য এ ভূমি আবার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবে এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় হবে, ইনশাল্লাহ। এই মুহূর্তে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ভাইদের রক্ষায় আসুন, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি। নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করি।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শাওয়াল মাসের ফজিলত
মানুষের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নির্দেশনা
মুমিন জীবনে সফলতা ও বিজয় অনিবার্য
ভবিষ্যৎ ও অদৃশ্যের নিয়ন্ত্রণ কেবল আল্লাহ তা’য়ালারই হাতে
আরও
X

আরও পড়ুন

মাগুরা পৌর আওয়ামী নেতা সাখাওয়াত হোসেন গ্রেফতার!

মাগুরা পৌর আওয়ামী নেতা সাখাওয়াত হোসেন গ্রেফতার!

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

সিরাজদিখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

সিরাজদিখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন গাজার দগ্ধ রোগীরা: এমএসএফ

চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন গাজার দগ্ধ রোগীরা: এমএসএফ

পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৫ জনের

পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৫ জনের

পেহেলগামকাণ্ডে আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান

পেহেলগামকাণ্ডে আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান

সীমান্তের জিরো লাইনে বিজিবি-বিএসএফ কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক

সীমান্তের জিরো লাইনে বিজিবি-বিএসএফ কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক

টাইমস হায়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশ সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যবিপ্রবি

টাইমস হায়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশ সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যবিপ্রবি

হজ নিয়ে প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সউদী

হজ নিয়ে প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সউদী

পেহেলগামে হামলা: আসামে একদিনে আটক ৯ জন

পেহেলগামে হামলা: আসামে একদিনে আটক ৯ জন

ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহারকে ‘বাড়াবাড়ি’ মনে করছেন মার্কিনিরা, টাইমস/সিয়েনা জরিপ

ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহারকে ‘বাড়াবাড়ি’ মনে করছেন মার্কিনিরা, টাইমস/সিয়েনা জরিপ

ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন কাল্পনিক, মানহানিকর ও অদায়িত্বপূর্ণ

ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন কাল্পনিক, মানহানিকর ও অদায়িত্বপূর্ণ

পাকিস্তানে সেনা অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত, আহত ৪

পাকিস্তানে সেনা অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত, আহত ৪

পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপে বিপাকে ভারতের এয়ারলাইনসগুলো

পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপে বিপাকে ভারতের এয়ারলাইনসগুলো

কালিগঞ্জে গরমে বেড়েছে তাল পাতার পাখার কদর

কালিগঞ্জে গরমে বেড়েছে তাল পাতার পাখার কদর

রোববার সিলেট টু ইউরোপ ১ম কার্গো ফ্লাইট চালু

রোববার সিলেট টু ইউরোপ ১ম কার্গো ফ্লাইট চালু

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে

সিমলা চুক্তি স্থগিত হলে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে?

সিমলা চুক্তি স্থগিত হলে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে?

মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ৩ জন নিহত

মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ৩ জন নিহত

সৈয়দপুরে হাঁসফাঁস গরমে বেড়েছে শরবতের চাহিদা

সৈয়দপুরে হাঁসফাঁস গরমে বেড়েছে শরবতের চাহিদা